মাও. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
রবিউল আওয়াল আরবি বছরের তৃতীয় মাস। এ মাসে পৃথিবীতে আগমণ করেন মানবতার মুক্তির দিশারি সাইয়্যেদুল মুরছালিন খাতামুন নাবিয়্যিন সরদারে দো-আলম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন গোটা পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ। এ প্রসংঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ( হে নবী) আমি তোমাকে সৃষ্টিকুলের জন্যে রহমত বানিয়েই পাঠিয়েছি (সুরা আম্বিয়া- ১০৭)।
যখন তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন তখন ছিল জাহেলিয়াতের যুগ। তাঁর প্রিয় জন্মভূমি পবিত্র মক্কা সহ গোটা পৃথিবী চলছিল আল্লাহর আইন কানুনের বিপরীতে। পবিত্র কাবা শরীফে ছিল ৩৬০ টি মুর্তি। জীবন্ত কবর দেওয়া হত কন্যা সন্তানদের। সমাজে প্রচলিত ছিল চক্রবৃদ্ধি সুদ প্রথা । রাষ্ট্র চলত জোর যার মুল্লুক তার এই নীতিতে। এছাড়া ছিল হাজারো অনিয়ম বিশৃঙ্খলা। রাসুল (সা.) জন্মের ৪০ বছর পর নবুয়াত প্রাপ্ত হন। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বেই এ সমস্ত অবস্থা দেখে তিনি কষ্ট পেতেন । চেষ্টা করতেন পরিবর্তনের। নিজ ঊদ্যেগে প্রতিষ্ঠা করেন হিলফুল ফুজুল।
পবিত্র কাবা শরীফ সংস্কারের সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে জাতিকে রক্ষা করার জন্য নিজেই এগিয়ে আসেন হাজরে আসওয়াদ স্বস্থানে স্থাপন করতে। নবুয়াত প্রাপ্তির পর শুরু করেন দাওয়াতি কাজ। দীর্ঘ ১৩ বছর দাওয়াত দেন পত্রিত মক্কা নগরিতে নির্যাতিত হন সাহাবি আজমাইনসহ নিজেও। তারপর মহান আল্লাহর নির্দেশে হিজরত করেন পবিত্র মদিনায়। এখানেও শান্তিতে থাকতে দেয়নি কাফির মুশরিকরা । শুরু হয় যুদ্ধ। বদর,ওহুদ, খন্দক সহ একাধিক যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন রাসুল (সা.)। নির্বাচিত হন মুসলিম জাহানের রাষ্ট্র নায়ক। একে একে দূর করেন জাহেলিয়াতের সকল কালাকানুন। মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবা শরিফে প্রবেশ করে প্রত্যেক মুর্তির বক্ষে স্বীয় ছড়ি দিয়ে আঘাত করে বলেন, সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত (বুখারি ও মুসলিম) এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ বলেন, তুমি বলো, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতে হবে ( সুরা বনি ঈসরাইল ৮১)।
নবম হিজরিতে হজ্জ ফরজ হলে নিজে না যেয়ে পাঠান হযরত আবু বকর (রাঃ) সহ অন্যান্য সাহাবিদের। হযরত আলী (রা.) কে এ কথা ঘোষণা দিতে বলেন যে, আগামী বছর হতে আর জাহেলি নিয়মে হজ্জ হবেনা। দশম হিজরীতে নিজে লক্ষাধিক সাহাবি আজমাইন নিয়ে হজ্জব্রত পালন করেন। বিদায়ি ভাষণ প্রদান করেন আরাফার ময়দানে। ভাষণে ফুটে উঠেছিল অনাগত মুসলিমদের করণিয় ও বর্জনীয় সকল বিষয়। এ ভাষণে সুদকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করেন ।
এ প্রসংঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা (সুদের ব্যপারে) আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের কাছে) আগের সুদী (কারবারের) যে সব বকেয়া আছে তোমরা তা ছেড়ে দাও, যদি সত্যিই তোমরা ঈমানদার হও (সুরা বাকারা ২৭৮)। কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়ার কঠিণ পরিনতি সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন, যখন সদ্যপ্রসূত মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করা হবে কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল (সুরা তাকওয়ীর-৮ ও ৯)।
উপরোক্ত আলোচনা হতে জানা এবং বুঝা যায় যে, রাসুল (সা.) নবুয়াত প্রাপ্তির পুর্বে এবং পরে সারাটা জীবন মানব কল্যানে কাজ করেছেন। তবে মক্কা বিজয়ের পর রাষ্টীয় ফরমান জারির মাধ্যমে যেভাবে সকল অন্যায় দূর করতে সক্ষম হন তেমনটি এর পূর্বে পারেন নি। তাই রবিউল আওয়ালের ডাক এটাই হওয়া উচিৎ যে, আমরা রাসুল (স.) এর কথা ও কাজ গুলো শুধু মুখে মুখে না বলে সেটাকে কাজে পরিণত করব ত্রবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্টীয় জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব যার মাধ্যমে দূর হবে সকল শিরক, বিদায়াত, দুঃখ, কষ্ট, জুলুম ও অবিচার। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।