1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
শাসিত প্রজন্ম ও শিক্ষকের শাসন! - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইন্দিরা সরকারের অধীনে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ: এক গ্রামের ত্যাগ ও ট্র্যাজেডি মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি, দাবি পেন্টাগনের কুড়িগ্রাম পাউবোর ডা‌ম্পিংয়ে ধীরগতি, ভিটেহারা মানুষ ট্রেনের বাথরুমে কুড়িগ্রামের নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে সাইফুল নামে যুবক আটক কুড়িগ্রামে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরু বৃহস্পতিবার, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিস্ফোরণে সাঁজোয়া যান ধ্বংস, নিহত সেনাদের নাম প্রকাশ ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ১৪ বিজ্ঞানী নিহত, দাবি রাষ্ট্রদূতের নিউ ইয়র্কে প্রথম মুসলিম মেয়র প্রার্থী, চমক দেখালেন জোহরান মামদানি ইরানের পারমাণবিক হামলায় আংশিক সাফল্য , ফাঁস হওয়া তথ্যে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

শাসিত প্রজন্ম ও শিক্ষকের শাসন!

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩
  • ২৬৩ জন খবরটি পড়েছেন

মাস্টার সব্যসাচী বিশ্বাস।

২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল। ওই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব অপেক্ষা নেতিবাচক প্রভাবই বর্তমান সমাজের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রধান কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রকৃত পক্ষে তা কতখানি সঠিক? শাস্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্রয়চ্যুত করবে, অপমানিত করবে, শিক্ষালয় নিশ্চয়ই কারাগার নয়, শিক্ষকগণ কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয় অথবা তারা আদালতের বিচারকের ভূমিকায় থাকবেন, শাস্তি দেবেন এমনটাতো নয়। বর্তমানের শিক্ষকগণের ভুলে গেলে চলবে না, পূর্ববর্তী শিক্ষকদের হাতেই ছিলো বর্তমানের সমাজ। তারা যেভাবে গঠন করেছে তেমনিভাবেই চলছে আজকের সমাজ।

শিক্ষকতা মহান পেশা। আবার অনেকেই বলেন পেশার চেয়ে বড় বিষয় শিক্ষকতা হচ্ছে একটি বিশেষ ব্রত। শিক্ষকতা মানব-সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে এগিয়েছে তার নিজের গতিতে। সত্যিকার অর্থে শিক্ষকতার মতো মহৎ ও মহান পেশা আর একটিও নেই। শিক্ষাকে স্বার্থক ও সুন্দর করে তোলার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান শিক্ষক। যিনি নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও জ্ঞানে সমাজের অন্য দশজনের থেকে পৃথক হবেন। শিক্ষিত দাবি করা বা না করা প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে থাকে শিক্ষাগুরুর অবদান। তেমনি “আজকের ছাত্র বা শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ” এমন কথা যদি সত্য হয় তাহলে, আজকের শিক্ষকগণও একদিন ছাত্র ছিলেন। তাদের শিক্ষকগণের কাছে তারা যে কড়া শাসনে শাসিত হয়ে এসেছেন এমন কথাই প্রমাণ করে যারা ছাত্রদেরকে বেত মারার পক্ষে বা শাসনের পক্ষে। যদিও তা ঢালাওভাবে সকল শিক্ষককে বলা যায় না, তবে বেশিরভাগই বলা যায়। তারাও চাইছেন একইরূপে শাসন করে ছাত্রদেরকে মানুষ বানাতে। তারা কখনও এমন কথা ভাবছেন না, আজকের অভিভাবকগণও তেমনি অবস্থার মধ্যে দিয়ে এসেছেন। শিক্ষকগণের শাসনের সেই পাঠদান পদ্ধতি থেকে বর্তমান অভিভাবকেরা একটা জিনিস শিখে নিয়েছেন যে, শাসন ছাড়া একজন শিশু মানুষ হতে পারে না। সমাজের কাউকে নিজের কথা শোনাতে হলে হাতে অস্ত্র চাই বা গায়ে জোর চাই। হাতে বেত চাওয়া শিক্ষকগণের মনোভাব এবং এ সকল অভিভাবকের চিন্তার কোনো তফাৎ নেই বলেই মনে হয়। তাই কারো কাছে নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে বা নিজের প্রভাব ফেলতে শাসন বা গায়ের জোর অথবা রক্তচক্ষু দরকার তাই তারা জানে এবং মনে প্রাণে মেনে নিয়েছে। কারণ বিগত দিনে তারা এমনভাবে বড় হয়েছে যে, তাদের ভাবনার প্রতিফলন সমাজের বিভিন্ন স্থানে রেখে চলেছে অহরহ।

দুর্বলের প্রতি গায়ের বা অর্থের জোর খাটিয়ে নিজেকে সবল প্রমাণের শিক্ষা বেত হাতে রাখা শিক্ষকেরই দেওয়া নয় কি? ভীতি বা ভয় প্রদর্শন করে আর যাই হোক শ্রদ্ধা আশা করা বোকামী বৈ কিছুই নয়!

 সমাজের দিকে তাকলেই বুঝা যায়, কিভাবে মানুষ মানুষের উপর জোর খাটিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করছে। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে নিজের আদর্শ হিসেবে নিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ অংশে তাদের শিক্ষকগণের আদর্শ বুকে নিয়ে বা ধারণ করে শাসন ত্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তারা বড় বড় বেতের লাঠি হাতে শিক্ষকদের ক্লাসে আসতে দেখেছে ভয়ে কেঁপেছে আর শিক্ষকদের অনুসরণ করেছে। বাস্তবে অস্ত্র হাতে তারা কেউ কেউ না ঘুরলেও শিক্ষকদের প্রতি তৈরি হয়েছে এক প্রকার অবজ্ঞা আর অবহেলা। যদিও অনেক শিক্ষক তা উপলব্ধি করতে না পেরেই আজও হাতে লাঠি বা অস্ত্র নিয়ে শাসনভার চাইছেন। সমাজে এমন অনেক মানুষ পাবেন যারা হয়তো জীবনে দুই তিনটা বছর বা তারও একটু বেশি সময় বিদ্যালয়ে গিয়েছে। তারপর তার বুঝে না পারার শাস্তি হিসেবে গায়ে বেতের দাগ নিয়ে ফিরে এসেছে আর ওমুখী হয়নি। তাকে ভালোবেসে বা তাকে বোঝাবার সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে আজ হয়তো বেতের দাগ মেনে নেওয়া শিক্ষার্থী সমাজে বড় অবদান রাখতে পারতো। রাষ্ট্রের যে কোনো দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারতো। আফসোস তার যে ওই শিক্ষকের মারের ভয়ে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। নষ্ট হয়েছে তার ভবিষ্যৎ। আজ তার সন্তানের গায়ে হাত কেউ তুললেই তার মাথায় আগুন ধরাটা স্বাভাবিক। সে যে আগুনে পুড়েছে সেই আগুনের কোনো আচ তার সন্তানের গায়ে লাগুক সে কখনওই চাইবে না। আমি নিজে আমার বন্ধুকে গুনে গুনে একান্নটা বেত মারতে দেখেছি। রক্তাক্ত জামা পরে সেই বিদায় নিয়েছিলো স্কুল থেকে আর ফিরে আসেনি।

আজকের শিশু জানে যে মানুষ হয়েই জন্ম নিয়েছে। তাকে আর মানুষ অন্তত হতে হবে না। শিক্ষককে এমনভাবে প্রস্তুুত হতে হবে যে, শিক্ষার্থীর মানসিকতা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সে ভালো মানুষ হতে পারে, তা নিশ্চয়ই শাসন দিয়ে সম্ভব নয়। যে দেশের শিক্ষা পদ্ধতি যত উন্নত, সে দেশ ও ততো উন্নত বা ক্ষমতাবান। আর এই শিক্ষা পদ্ধতির পরিচালক সে দেশের শিক্ষালয়ের শিক্ষকগণ। সবাই বলে, Knowledge is power.  হাতে বেত তুলে নিলে এ কথাটার গুরুত্ব বলে কিছু রইলো কি? শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মাবে শিক্ষকের আদর্শ এবং তার শিক্ষা দানের পদ্ধতির মাধ্যমে। তিনি চেষ্টা করবেন শিক্ষার্থীদের আদর্শ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে। সেখানে শিক্ষকগণ ব্যর্থ হলে বুঝবেন প্রাপ্তি কিন্তু শুন্য। 

কিছু অভিভাবকের সাথে আলোচনায় বসলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। তাদের সাথে কথা বললে, বিদ্যালয়ের স্মৃতি তুললেই আগে বলেন সেই শিক্ষকের নাম যিনি ক্লাসে বেতের আঘাতে জর্জরিত করেছেন শিক্ষার্থীদের। আসলে তা শিক্ষকের জন্য সুনামের না কি বদনামের?  গল্পের ছলে বলে বসেন, আমার শিক্ষক হওয়ার খুব আশা ছিলো কারণ বেত মারা ওই শিক্ষকের সন্তান হবে আমার ছাত্র। শিক্ষকের সন্তানের পিঠে, হাতে বেত মেরে বুঝিয়ে দিবো কেমন লাগে? সে আশা কারো কারো পূরণ হয়েছে, শিক্ষক হয়েছেন বটে ছাত্র হিসেবে নিজের শিক্ষকের সন্তানকে একটা আঘাতও করতে পারেননি। কারণ দেশের প্রচলিত আইন তার সে গুঁড়ে বালি ছিটিয়ে দিয়েছে। 

কিছু কিছু মানুষ খুব বলে, আমরা শিক্ষকদের দেখলে যে কোনো প্রকার যানবাহন থেকে নেমে তাদের সম্মান জানাতাম এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে তা নেই। আসলে তখনকার সময়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই পায়ে হেটে চলাফেরা করতেন কিন্তু বর্তমানে প্রায় ১০০% শিক্ষক যে কোনো বাহনে চলাচল করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দেখে নিজের যানবাহন থেকে নামার পূর্বেই শিক্ষক চলে যান। তার পক্ষে শিক্ষকের কাছে কুশল বিনিময়ের সুযোগটাই মেলে না। সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমি দেখিনি যে, চেয়ার ছেড়ে শিক্ষার্থী উঠে দাড়াইনি বা যানবাহন থেকে নামেনি এমন। শ্রদ্ধার জায়গা ধরে রাখার দ্বায়িত্ব শিক্ষকদেরই। সেই কাজেও কিছু কিছু শিক্ষক সার্থক নয়।

পত্রিকা খুললেই যেসব খবর প্রতিদিন মুখরোচক বলে মনে হয় তার মধ্যে দশ পাঁচটা শিক্ষকদের নিয়ে হয়ে থাকে একথা অস্বীকার করা বোধকরি ভুল হবে। সারাদেশে প্রতিদিন কোনো না কোনো শিক্ষকের কিচ্ছা কাহিনী উঠে আসছেই। শিক্ষক নিজে সময়মত স্কুলে না এসে শিক্ষার্থীদের সময় জ্ঞান দিতে গেলে হাসির পাত্র হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোথাও কোথাও শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বলছে পড়তে হবে, লিখতে হবে, জানতে হবে আবার সেই শিক্ষককে পরীক্ষার কক্ষে প্রদর্শক হিসেবে দ্বায়িত্ব দিলে তার হাতেই প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যায় তারা। ফলাফল কি চরম দুর্গতি হতে পারে না? কারণ এখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের হাতেই দুর্নীতির সুযোগ পায়। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকা শিক্ষক কিভাবে সম্মান দাবি করে? তা কারো বুঝে আসার কথা নয়। হাতের লাঠিখানা সরিয়ে নেওয়াতে জোর করে নিজের আদর্শ টিকিয়ে রাখা সম্ভবপর হচ্ছে না, তাই এত আহাজরি। আদর্শ শিক্ষক যিনি তার সম্মান সকল জায়গাতে। মূলত শিক্ষকদের নিজেদের বদলানো প্রয়োজন সময় ও সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে। অন্যথায় সম্মান টিকিয়ে রাখার উপায় আর রইবে না।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews