নিজস্ব প্রিতিবেদক। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু সেই মানুষটিই অবসর গ্রহনের পরেই হয়ে পড়েন অসহায়। অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
চাকরি জীবন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য বোর্ডের শরণাপন্ন হলেও ৪-৬৫ বছরেও পাচ্ছেন না অবসর ভাতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বয়সের ভারে ন্যুজ্ব শিক্ষকরা অবসর সুবিধার জন্য বোর্ডে গিয়ে ধরণা দেন।
এ প্রতিবেদকে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের ভুক্তভোগী মাদ্রাসা শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ৩৫ বছর সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি করে ২০২০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর ওই বছরের ২৭ /০৭/২০২০ তারিখে অবসরভাতা ও কল্যাণ তহবিলের টাকার জন্য আবেদন করি।তাঁর অবসরভাতা আবেদনের আইডি নম্বর- ০৬৯১০৩। তিনি জানান, অনেক ঘোরাঘুরির দেড়বছর পরে কল্যাণ তহবিলের টাকাটা পেয়েছিলাম। দীর্ঘ চাকরীজীবনে বেতনের ৬ শতাংশ অবসর ভাতা বাবদ কাটা হয়েছে । সেই অর্থসহ এখন তিনি অবসর ভাতা পাবেন। দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য দালাল ধরেও কোন লাভ হয়নি শুধু কিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। আক্ষেপ করে এই মাদ্রাসা শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ৪ বছর পেরিয়ে গেলো আর কবে টাকা পাবো।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি অবসর নেন। অবসরকালীন তাঁর বেতন স্কেল ছিলো ১১২০০ টাকা।
তিন সন্তানের জনক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, দুই ছেলে পৃথক হয়ে গেছে আর অসুস্থ এক মেয়ে নিয়ে তিন জনের সংসার আর চলছে না। তিনি নিজেও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিজে একটা হোমিও চিকিৎসালয়য় আছে সেখানে বসে রোগী দেখে যেটুকু আয় হয় তা দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে সংসার। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। আশায় আশায় অপেক্ষা করছি কবে পাবো অবসর ভাতা।
এ বিষয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধার বোর্ড সূত্র জানায় , বাজেট ঘাটতি কারণে শিক্ষক-কর্মচারীর অবসরভাতার অর্থ দিতে একটু দেরি হয়ে যায়। তবে মৃত্যুজনিত শিক্ষক-কর্মচারিদের এ অর্থ দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।
দেশের বিভিন্ন দূরপ্রান্ত থেকে শিক্ষকদের ঢাকায় এসে খোঁজ নেয়ায় অনেক কষ্ট হয় এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে অবসর সুবিধার বোর্ডের এক পরিচালক ব্যাক্তিগত অভিমত থেকে বলেন, আমার মনে হয় ঢাকার পাশাপাশি দেশের বড় বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে অবসর সুবিধার বোর্ডের অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করলে ওই সকল শিক্ষকদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।