মাদারীপুর প্রতিনিধি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা সাইফুল ইসলামকে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিনতেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মানুষকে মারধর, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর জন্য এলাকায় তিনি ‘হিটার সাইফুল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সম্প্রতি অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে প্রতিবেশী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সাইফুল। এর জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন তাঁর দুই ভাইও।
সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ির মৃত আজিবর সরদারের ছোট ছেলে। ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। হামলায় সাইফুলের মেজ ভাই আতাউর রহমান সরদার (৩৫) ও চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৭) নিহত হন। গুরুতর আহত বড় ভাই অলিল সরদার (৪০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পূর্ববিরোধ থেকেই সাইফুলকে টার্গেট করে মোল্লা, আকন ও খান বংশের লোকজন হামলা চালায়। যখন তাঁর দুই ভাই ও চাচাতো ভাই সাইফুলকে বাঁচাতে এগিয়ে যান, তখন তাঁদের ওপরও হামলা হয়। মূলত সাইফুলকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছিল।
আট মাস আগে খোয়াজপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারকে চাঁদার টাকা না দেওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছিলেন সাইফুল ও তাঁর সহযোগীরা। গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও এলাকায় সন্ত্রাস চালান তিনি।
ভুক্তভোগী হোসেন সরদার বলেন, ‘নিকটাত্মীয় হয়েও তার হাত থেকে রেহাই পাইনি। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা সে করেনি। কেউ তার কথা না শুনলেই মারধর করত। আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ও হাত ভেঙে দেয়। আমি এখনো শয্যাশায়ী। বহু মানুষকে সে পঙ্গু বানিয়েছে। যে তার পথে বাধা হয়েছে, তাকে খুন করেছে।’
নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। এতে সরদার বংশের হোসেন সরদারকে প্রধান আসামি, মতিউর রহমান সরদারকে ২ নম্বর আসামি ও কৃষক দলের নেতা খান বংশের শাহজাহান খানকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার তিন ছেলেকেই ওরা খুন করতে চেয়েছিল। খুনি শাহজাহান খান, মতিউর সরদার ও হোসেন সরদার লোকজন নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওরা মসজিদে ঢুকেও রক্ষা পায়নি। যারা আমার বুক খালি করেছে, ওদের ফাঁসি চাই।’