বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিক্কি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের বড় আমদানি প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়, সম্প্রতি নাহিদ ইসলাম কেন বলেছিলেন তিনি পদত্যাগ করতে পারেন? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে যেটার উত্তর দিইনি, সেটা জাপানে গিয়ে দিলে আমার জন্য সমস্যা হতে পারে।”
তবে বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। এই পটভূমিতে বাংলাদেশ সুতা, তেল ও গ্যাস আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে, যাতে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে প্রায় $৭.৯ বিলিয়নের সুতা বা তুলা আমদানি করে, যার বড় অংশ আসে মধ্য এশিয়া থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলা ও সুতা ছিল $৩৬১ মিলিয়ন। এ সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে $৬.৮ বিলিয়ন এবং আমদানি করেছে $২.৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা দেখছি কেন মধ্য এশিয়া বা ভারতের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা কিনছি না। এতে মার্কিন ঘাটতি কমবে।” তিনি আরও জানান, মার্কিন তুলা উৎপাদকরা বাংলাদেশের বন্ধু এবং কংগ্রেস ও সিনেটে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তবে ড. ইউনূস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল কেনার সুযোগ তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, শুল্কের হুমকি নিয়ে আতঙ্কিত নই, বরং এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখছি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছে, জানিয়ে রায়ে বলা হয়—এই ক্ষমতা কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়।
নিজ দেশে ফিরে ড. ইউনূস বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে $২৩৪ বিলিয়ন পাচার হয়েছে। এর মধ্যে $১১ থেকে $১২ বিলিয়নের সম্পদ ইতিমধ্যে দেশে শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে।
এই অর্থ দিয়ে একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। তহবিলের অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস।