কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হল হয়ে উঠেছে মাদকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল। এমনটাই বলছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্যমতে, হল প্রভোস্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাদকের কারণে বহিষ্কৃত ও অভিযুক্তরা হলে থাকছেন। তবে এ নিয়ে নেই হল প্রভোস্টের কার্যত দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ জুলাই কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে গাঁজা ও ব্যবহৃত বুলেট উদ্ধার করেন হল প্রভোস্ট মো. হারুন। ঘটনার পর কক্ষটি তালা মারা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রবিউল আওয়াল রবিনকে হলে থাকতে নিষেধাজ্ঞা দেন হল প্রভোস্ট। তবে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হলে অবস্থান করছেন।জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রবিন তার সহপাঠী হোসাইন আহাম্মেদ মোশাররফের রুমে অবস্থান করছেন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে হল প্রভোস্টকে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তাদের ভাষ্যমতে, এবারই প্রথম নয়। এর আগেও মাদক গ্রহণে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সাইদ উদ্দিন (আনাছ) নিয়মিত হলে অবস্থান করতেন। ঐ বিষয়েও হল প্রভোস্টকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে হল প্রভোস্টের দায়িত্ব অবহেলা নিয়ে।
আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, হল চালানোর মত দক্ষতা ওনার নেই। হলের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে উনাকে বলা হলেও তেমন সমাধান পাওয়া যায়নি। এর উপর উনি আসার পর থেকে মাদক গ্রহনকারীরা হলে সাচ্ছন্দ্যে আশ্রয় নিচ্ছে। ওনাকে তেমন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখি না। মুখে মুখে বলেন পদক্ষেপ নিবেন, কিন্তু আদৌও তা পালন করেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে এমন একজন অদক্ষ ব্যক্তিকে হল প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেন বুঝে আসে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মাঠ থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় সাইদ উদ্দিন আহমেদ আটক করে প্রক্টোরিয়াল বডি। ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং একবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও আবাসিক হলে অবস্থানের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে ঐ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী কাজী নজরুল ইসলাম হলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও নিয়মিত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আবরার এবং ফিনান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল রবিনের কক্ষে। গত ২৮ জুলাই পুনরায় মাদক নিয়ে আটক হন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সাইদ উদ্দিন আনাছ।
এ বিষয়ে নজরুল হল আবাসিক শিক্ষার্থী সোহান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো টলারেন্স থাকা সত্ত্বেও মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর পক্ষ নেওয়া মাদকের পক্ষ নেওয়া একই কথা। হল প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে নজরুল হল মাদক সংশ্লিষ্ট ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ মো. হারুন বলেন‚ ‘৩০৭ নং রুম থেকে মাদক উদ্ধারের পর‚ হল প্রশাসন কতৃক ৩০৭-নং রুমে অবস্থানরত অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের হল থেকে বাইরে অবস্থানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিলো। এরপর তাদের হলে অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ তাদের আশ্রয় প্রদান করে সেটি অন্যায়। আমি আশ্রয়দাতাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করবো এরপর শোকজ নোটিশ পাঠাবো।’