মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ ,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি।।
পূর্ব সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে বনজীবিদের কাছ থেকে। বনে প্রবেশ করলেই যত্র-তত্র শোনা যাচ্ছে বাঘের ডাক। দেখাও মিলছে প্রচুর বাঘের। গত প্রায় ১০ বছরেও বনে দেখা যায়নি বাঘের এমন উপস্থিতি।
পূর্ব বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাঘ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, চোরা কারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন ও বাঘের আবাস্থলে নজরদারী বাড়ানোর ফলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঘ বৃদ্ধির ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য সহ স্থানীয়রা।
বনরক্ষীরা বন রক্ষায় সরকারী দায়ীত্ব পালন করলেও রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রাকৃতিক ভাবে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সার্বক্ষনিক সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বাঘের ভয়ে মানুষ বনে প্রবেশ করতে সাহস না পাওয়ায় রক্ষা পাচ্ছে বন। সেই অতন্দ্র প্রহরী বাঘের সংখ্যা ১৯৮২ সালের জরিপের ৪৫৩ টির পর হ্রাস পেয়ে ১৯১৮ সালের জরিপে দাড়িয়েছে ১১৪ টিতে। এর পরেও চোরা শিকারীদের খপ্পরে পড়ে, বার্ধক্য জনিত কারনে ও অসুস্থতায় কমতে থাকে সুন্দর বনের বাঘের সংখ্যা। ফলে হতাশা দেখা দেয় বনবিভাগ, বাঘ রক্ষা বিষয়ক কমিটি ও সচেতন মহলে।
গত কয়েক বারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাঘ গননার ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৫৩ টি। ২০০৪ সালে জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী ও বন বিভাগ যৌথ শুমারী অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা দাড়ায় ৪৪০ টি। ২০১৩ সালের জড়িপে বাঘের সংখ্যা হয় ১০৬ টি। ২০১৮ সালের সর্ব শেষ জড়িপে ১১৪ টি বাঘের অস্তিত্ব পান বিশেষজ্ঞরা। এ ভাবে বাঘ গনণার নিম্নগামী ফলাফলে বাঘের সংখ্যা টিকিয়ে রাখা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন বনরক্ষীসহ বন সুরক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
তবে বর্তমানে বনে বাঘের আশানুরুপ উপস্থিতি আশার সঞ্চার করেছে বন ও পরিবেশ বাদীদের মাঝে।
জেলে ও মৌয়ালী সুত্র জানায়, পুর্ব সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পটে প্রায়ই মিলছে বাঘের দেখা। পর্যটকদের দৃষ্টিও এড়াচ্ছেনা বাঘের আনাগোনা। বনজীবি ও বন রক্ষীরা জানান, গত ১০ বছরেও এ ভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ্য করা যায়নি। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে রয়েছে বনজীবিরাও।
সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির শরণখোলা উপজেলার সহ-সভাপতি মোঃ ওয়াদুদ আকন জানান, সুন্দরবন রক্ষায় বাঘের বিরাট ভুমিকা রয়েছে। বাঘ বৃদ্ধির ঘটনা সুন্দর বনের জন্য একটি সুখবর।
টাইগার টীমের শরণখোলা উপজেলার সমন্বয়ক মোঃ আলম হাওলাদার জানান, বাঘ শিকারীদের প্রতি নজরদারী বাড়াতে হবে। বাঘ হত্যাকারীদের প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষনা করতে হবে । বন্যপ্রানী নিধন আইনের কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
পূর্বসুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ সামসুল অরেফিন বাঘ বৃদ্ধির খবর স্বীকার করে জানান, চোরা শিকারীদের প্রতি কঠোর অবস্থান ও বাঘের আবাস্থলে নজরদারী বাড়ানোর ফলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । বাঘ রক্ষায় বনবিভাগের সাথে সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।