লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল,শালিখা(মাগুরা)।
গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া সবই গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি। যাকে কেন্দ্র কওে টিকে আছে গ্রামীণ জীবন। অনেকে আবার শুধু ছাগল বা ভেড়াকে গরীবের গাভী বলে থাকে। আর এই পশুগুলোর উপর নির্ভর কওে বেচেঁ থাকে গ্রামের মধ্যবিত্তের স্বপ্ন।
তাইতো কৃষিকাজের পাশাপাশি গবাদিপশু পালনেই ঝুঁকছে মধ্যবিত্তরা। সামর্থের বাইরে থাকলে কেউ ব্যাংক থেকে আবার কেউ বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে দুইচারটি গরু বা ছাগল ক্রয় করে শুরু করছেন পশুপালনের কাজ। বাড়ির আঙিনায় ঘর তৈরী করেই গড়ছেন ছোট বড় খামার। পাশাপাশি নিকটবর্তী জমিতে শুরু করছেন ঘাস রোপনের কাজ। ফলে বাজারজাত গোখাদ্যেও মুল্য বৃদ্ধি পেলেও খুব প্রভাব পড়ছে না খামারী গুলোর উপর। এছাড়া গরু ছাগলের ঘাস এখন স্বল্প মুল্যে পাওয়া যাচ্ছে স্বানীয় বাজারগুলোতে। গ্রামীন অর্থনীতির এই স্তম্ভের উপর নির্ভর করেই চলছে শত শত পরিবার। এর উপর নির্ভর করেই অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকে খামারের পশু বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেদেরকে প্রবাসে পাঠাচ্ছেন।
শালিখা উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে দেয়া এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় উপজেলায় বর্তমানে গাভীর খামার রয়েছে ৮৮৯টি, মোটাতাজাকরণ খামার ২৮৬টি, ছাগলের খামার ১৯৭টি, ভেড়ার খামার ১৫টি, মুরগীর খামার ১৪১টিসহ মোট খামারের সংখ্যা ১৫ শত ২৮টি। যেখানে গত ৪বছর পুর্বে মোট খামারের সংখ্যা ছিল ৭৬৭টি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করে দেখা যায় ৪/৫ বছর পুর্বে শালিখায় যত গুলো খামার ছিল বর্তমানে তা দ্বিগুন বৃদ্ধিপেয়েছে। এছাড়াও উপজেলার উজগ্রাম,চতিয়া,বড় থৈপাড়া,ছোট থৈপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ভেড়া পালনের জন্য ভেড়ার গ্রাম নামে পরিচিত। ভেড়া পালনে স্বাবলম্বী বড় থৈপাড়া গ্রামের রত্না বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান বর্তমানে আমার খামারে দশটা ভেড়া আছে যার উপর নির্ভর করেই পরিবারের ভরণপোষনসহ নানাবিধ খরচ চলে।
শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের খামারী উবায়দুল মোল্যা বলেন আমার খামারে ছয়টি গরু আছে,আমি প্রতি ছয় মাস পর পর দুটি করে গরু বিক্রি করি, তা থেকে যে অর্থ পাই তাই দিয়ে আমি জমি বন্দক নিয়ে চাষ করি। একই ইউনিয়নের দীঘি গ্রামের রতন বিশ্বাস বলেন-কৃষিকাজ এবং গরুর উপর নির্ভর করেই মুলত: আমার সংসার চলে। এক বছর পর পর একটি বা দুটি করে গরু বিক্রি করি। তিনি বলেন আমাদের কাছে গরুর গোয়ালঘরটাই ব্যাংকের মত। যখন অর্থের প্রয়োজন হয় তখনই গরু বিক্রি করে টাকা বের করি। এছাড়াও জমির উদ্দিন,নুর ইসলাম,আক্কাসসহ কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় খামারে থাকা গরু বিক্রি করে ছেলে সন্তানদের প্রবাসে পাঠাচ্ছেন। অনেকে আবার মাঠান জায়গা জমিও কিনছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কাছে পশু পালন করা একদিকে যেমন সম্মানের অপর দিকে অর্থের যোগানও বটে। তাই পশু পালনের দিকে অনেকেই ঝুকঁছেন।
ঊপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাস চন্দ্র গোস্বামী বলেন গ্রামীন অর্থনীতি মুলত: অনেকটাই পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। তাই যেসব খামারীরা গশুপালন করে নিজেদেও স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখার চেষ্টা করছে তাদেরকে আমাদের দপ্তর থেকে যথা সম্ভব প্রশিক্ষন ও পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। একারনেই শালিখা উপজেলায় গত কয়েক বছরের চেয়ে বর্তমান খামারীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি জানান।