শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে কাঁকড়া শিকারী তিন জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যুরা। মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনের মাইশার কোল ও ফিরিঙ্গি নদীর মোল্যাখালী খাল থেকে গত সোমবার সাত সদস্যের একটি বনদস্যু দল তাদের অপহরণ করে।
অপহৃতরা হলো শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের নাজির সরদারের ছেলে রেজাউল ইসলাম(৩৮), গোলাম মোস্তফার ছেলে সুজন গাজী(২৭) ও কয়রা উপজেলার দোসালী গ্রামের শেরআলী মোল্যা ওরফে কবিরাজের ছেলে এমদাদুল হক(৩৩)।
ফিরে আসা জেলেরা জানায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা ও কোবাদক স্টেশন থেকে পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে গত শনিবার তারা একত্রে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁকড়া শিকারের সময় সোমবার বিকাল ও সন্ধ্যায় তিনটি পৃথক স্থান হতে তিন সহযোগীকে স্বশস্ত্র সাত দস্যু অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জিম্মি জেলেদের পরিবারের মোবাইলে যোগাযোগ করে তারা মুক্তিপণের অংক নিশ্চিত করবে বলেও জানান ফিরে আসা এসব জেলে।
এদিকে গত সপ্তাহে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলে দবিরুল ইসলাম ও খবিরুল হাসান জানান, প্রায় দুই মাস আগে মজনু তিন সহযোীসহ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবনে দস্যুতা শুরু করে। পরবর্তীতে আলিম, মিলন পাটোয়ারী ও রবিউল চারটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্তে দস্যুতায় লিপ্ত হয়। তবে সম্প্রতি দুই বাহিনী সংঘবদ্ধ হয়ে গোটা পশ্চিম সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার মজনু আগে থেকে খুলনার সোনাডাঙায় প্রসাদাসম বাড়ি তৈরী করে বসবাস করে। তবে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ আটিরপর গ্রামের আলিম, মিলন ও রবিউল বাড়িতে অবস্থান করেই বনে দস্যুতা চালিয়ে আসছিলেন।
এসব জেলে আরও জানায় গত ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুর্ঘষ্য এ তিন বাহিনীর ১১জনের বেশী সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। তবে ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর উক্ত চিহ্নিত বনদস্যুরা আবারও সুন্দরবনে সক্রিয় হয়েছে। বনদস্যু দলটি বিকাশযোগে মুক্তিপণের টাকা আদায় করছে বলেও ভুক্তোভোগী জেলরা নিশ্চিত করেন।
এসব বিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক হাসানুর রহমান জানান প্রায় প্রতিদিন কমবেশী জেলে ডাকাতের হাতে জিম্মি হয়ে মুক্তিপন দিয়ে বাড়িতে ফিরছে। বনবিভাগের পর্যাপ্ত জনবলসহ আধুনিক অস্ত্রপাতি না থাকায় অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর জানান কোন জেলেকে অপহরণের বিষয়ে পুলিশকে কেউ অবহিত করেনি। তবে বনদুস্যদের তৎপরতার বিষয়ে কিছুদিন ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।