1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
আশুরা কী? এর পটভূমি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ও প্রচলিত বিতর্ক - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পবিত্র আশুরা আজ মণিরামপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল দুই যাত্রীর রাউজানে মুখোশধারীদের গুলিতে বিএনপি কর্মী নিহত বাঘারপাড়ায় ভীমরুলের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু বাঘারপাড়া আওয়ামীলীগ নেতা জুলফিকার আলি জুলাই আর নেই আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডে এক্সিকিউটিভ/সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ, কাজ সপ্তাহে ৫ দিন পঞ্চগড়ে ছেলের গলায় চুরি ধরে মাকে ধর্ষণ,আটক ৪ ২১ বছর পর দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি‘র সম্মেলন- বাচ্চু মোল্লা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তায় তাজিয়া মিছিল: আশুরার শোক পালনে শিয়া সম্প্রদায় র‍্যাঙ্কিংয়ে সুখবর বাংলাদেশের, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতে ফিরল নবম স্থানে

আশুরা কী? এর পটভূমি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ও প্রচলিত বিতর্ক

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫
  • ১২ জন খবরটি পড়েছেন

আশুরা, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধাবোধ এবং নানা ঐতিহাসিক স্মৃতির জন্ম দেয়। হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশম দিনে পালিত হয় এই দিনটি। “আশুরা” শব্দটি আরবি ‘আশারুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘দশম’।

এর নামকরণের পেছনে রয়েছে মুহাররম মাসের দশম দিনের বিশেষত্ব। কিন্তু এই দশম দিনটি কেবল একটি তারিখ নয়, এটি যুগ যুগ ধরে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী, যা এই দিনটিকে দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা।

আশুরা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আশুরা শুধুমাত্র একটি সাধারণ দিন নয়, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ধর্মীয় তাৎপর্য এটিকে অনন্য করে তুলেছে। ইসলামের ইতিহাসে বেশ কিছু যুগান্তকারী ঘটনা এই দিনেই ঘটেছিল, যা এটিকে মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ করে তোলে। এই দিনটি একদিকে যেমন শোক ও ত্যাগের প্রতীক, তেমনি অন্যদিকে মুক্তি ও বিজয়ের স্মারক।

আশুরার দিনের প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ

আশুরার দিনটি ইসলামের ইতিহাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতি বহন করে:

১. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা: আশুরার দিনের সবচেয়ে পরিচিত এবং হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হলো ৬১ হিজরিতে (৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইয়াজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি সপরিবারে নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহকে ত্যাগ, ধৈর্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগায়। শিয়া মুসলিমদের কাছে এটি প্রধান শোক দিবস।

২. ফেরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের মুক্তি: হাদিস অনুযায়ী, এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.) এবং তার অনুসারী বনি ইসরাইলকে ফেরাউন ও তার বাহিনীর কবল থেকে লোহিত সাগর বিভক্ত করে রক্ষা করেছিলেন। ফেরাউন তার বিশাল বাহিনী নিয়ে সাগরে ডুবে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে মুসা (আ.) এই দিনে রোজা রেখেছিলেন, যা পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি সুন্নত হিসেবে প্রচলিত হয়।

৩. নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি: এই দিনে হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পেয়েছিল এবং জودي পর্বতে নোঙর ফেলেছিল।

৪. অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আশুরার ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামিক বর্ণনা অনুযায়ী, আশুরার দিন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • হযরত আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হওয়া।
  • হযরত ইদ্রিস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া।
  • হযরত আইয়ুব (আ.)-এর রোগমুক্তি লাভ।
  • হযরত ইউনুস (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়া।
  • হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম এবং তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া।
  • কিয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে বলে কোনো কোনো বর্ণনায় উল্লেখ আছে।

আশুরার ধর্মীয় গুরুত্ব ও আমল: কেন রোজা রাখা হয়?

ইসলামে আশুরার দিন রোজা রাখার বিশেষ ফযিলত রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় এসে যখন দেখতে পান ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখে, তখন তিনি এর কারণ জানতে চাইলে তারা মূসা (আ.)-এর মুক্তির কথা বলেন। তখন নবী করিম (সা.) বলেন, “আমরা মূসার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার।” এরপর তিনি আশুরার দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।

আশুরার রোজার ফযিলত: হাদিসে এসেছে, আশুরার দিনের রোজার মাধ্যমে আল্লাহ বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এই ফযিলত বহু মুসলিমকে এই দিনে রোজা রাখতে উৎসাহিত করে।

রোজা রাখার সঠিক পদ্ধতি: ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য পরিহার করতে এবং রোজার ফযিলত পূর্ণ করতে মহানবী (সা.) শুধুমাত্র দশম তারিখের সঙ্গে নবম বা একাদশ তারিখের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ, মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ রোজা রাখা সুন্নত। শুধুমাত্র ১০ তারিখ রোজা রাখা মাকরূহ বা অনুচিত।

আশুরার দিনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমল

রোজা রাখা ছাড়াও এই দিনে নফল ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা করা, আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং বেশি বেশি জিকির-আজগার করা যেতে পারে। তবে আশুরার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ কোনো স্বতন্ত্র ফযিলতের কথা সরাসরি নির্ভরযোগ্য হাদিসে উল্লেখ নেই, বরং যেকোনো সময় আন্তরিকভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।

শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে আশুরা পালন: পার্থক্য কোথায়?

আশুরা পালন পদ্ধতিতে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতা থেকে উদ্ভূত:

  • সুন্নি মুসলিমগণ: মূলত রোজা রাখা এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তওবা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আশুরা পালন করেন। তারা কারবালার ঘটনাকে অত্যন্ত শোকাবহ মনে করলেও শোক পালনের নির্দিষ্ট রীতিনীতি অনুসরণ করেন না, বরং এটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। সুন্নিদের কাছে এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণের দিন।
  • শিয়া মুসলিমগণ: কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুরার দিনটি এক গভীর শোক ও মাতমের দিন হিসেবে পালন করেন। তারা ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে স্মরণ করে বিভিন্ন শোক মিছিল (তাজিয়া মিছিল) বের করেন, যেখানে অনেকেই বুক চাপড়ে বা নিজেদের শরীরকে আঘাত করে শোক প্রকাশ করেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অংশ এবং হুসাইন (রা.)-এর প্রতি আনুগত্য ও দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম।

আশুরা ঘিরে প্রচলিত বিতর্ক ও কুসংস্কার: কী বর্জনীয়?

আশুরার দিনে প্রচলিত কিছু প্রথা বা কার্যক্রম নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে এবং কিছু কুসংস্কারও দেখা যায়:

  • তাজিয়া মিছিল: এটি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত একটি শোক মিছিল। কিছু সুন্নি আলেম এটিকে অনৈসলামিক মনে করেন, কারণ এটি বাহ্যিক শোক প্রদর্শনের একটি রূপ যা ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী এবং কখনও কখনও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়।
  • মাতম ও আত্ম-আঘাত: মাতম করা বা ছুরি দিয়ে নিজেদের আঘাত করে রক্ত ঝরানো—এগুলো শিয়াদের শোক পালনের একটি অংশ। সুন্নি ইসলামে এমন কার্যকলাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং ইসলামে নিজেকে আঘাত করাকে হারাম বলে গণ্য করা হয়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড শরীর ও আত্মার ক্ষতি করে, যা ইসলামের শিক্ষা নয়।
  • প্রচলিত কুসংস্কার: আশুরার দিনে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার বা অপ্রচলিত রীতির প্রচলন দেখা যায়, যেমন বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করা (যেমন খিচুড়ি), নির্দিষ্ট উপায়ে পানিতে ডুব দেওয়া, নির্দিষ্ট সংখ্যায় খাবার বিতরণ করা ইত্যাদি। এসবের কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই এবং এড়িয়ে চলা উচিত।

শেষ কথা

আশুরা মুসলিমদের জন্য শোক, ত্যাগ, ধৈর্য এবং ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার এক মহান শিক্ষা নিয়ে আসে। এই দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যের জন্য লড়াই করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই দিনটিকে পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও সহিহ সুন্নাহ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মুসলিমের উচিত নির্ভরযোগ্য ইসলামিক উৎস থেকে আশুরার প্রকৃত তাৎপর্য জেনে সে অনুযায়ী আমল করা এবং সকল প্রকার বাড়াবাড়ি ও কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews