স্টাফ রিপোর্টার,অভয়নগর থেকে,
শ্বশুরের কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু (৩৩)। শনিবার সকালে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বিথীর পিতা শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের একথা জানান।
হত্যাকান্ডের পর শুক্রবার মধ্যরাতে বিথীর পিতা শেখ মুজিবর রহমান বাদি হয়ে আটক জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, “পারিবারিকভাবে ২০১১সালে আমার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথীর সাথে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মশিউর বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিয়ে হয়। তারপর তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জহুরুল আমার নিকট বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সে আমার মেয়ে ও নাতিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতো। মেয়ে ও দুই নাতির সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১সালের ২২জুন তাকে ১লাখ ৬০হাজার টাকা প্রদান করি। এরপর আরো টাকা চাইলে আমার মেয়ে বিথী তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) ও সাফিয়া আক্তারকে (২) সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে।
পরবর্তীতে গত ১৫জুলাই শুক্রবার সকালে জামাই জহুরুল আমার বাড়িতে আসে। আমার মেয়ে ও দুই নাতিকে সাথে নিয়ে ওইদিন আনুমানিক সকাল সাড়ে ১১টার সময় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলা বাগানের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে। এ হত্যাকান্ডে আমি শুক্রবার মধ্যরাতে বাদি হয়ে জামাই জহুরুলের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। আমার মেয়ে ও দুই নাতির হত্যাকারী জহুরুলের ফাঁসি দাবি করছি।”
আটক জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু স্ত্রী ও দুই মেয়েকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে কখনও টাকা পয়সা পাইনি। স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আমি এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছি। হত্যার আগে আমি আমার স্ত্রীকে মারপিটও করেছি। নির্জন ওই কলাবাগানের সামনে পৌঁছালে আমার মনে হত্যার পরিকল্পনা আসে। প্রথমে স্ত্রীকে পরে বড় মেয়ে ও শেষে ছোট মেয়েকে হত্যা করি। এরপর ওইদিন বিকালে আমি নিজে স্থানীয় বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে আত্মসমর্পন করি। আমি একজন খুনী। আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই।”
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা অভয়নগর থানার এসআই উত্তম কুমার জানান, আটক জহুরুলকে শনিবার যশোর আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন্।
অভয়নগর থানার ওসি একেএম শামীম হাসান জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বিথীর পিতা বাদি হয়ে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দাযের করেন। শনিবার সকালে নিহত তিনজনের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুরে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামের নূর ইসলামের কলাবাগানের মধ্যে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু। ওইদিন বিকালে তিনি পুলিশের নিকট হত্যাকান্ড ঘটানোর কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেন। জহুরূল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী।