মুহাম্মদ রায়হান উদ্দিন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ।
পুষ্পমাল্য অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, কাঙালি ভোজ, আলোচনা ও স্মরণসভার মধ্যে দিয়ে ২১ আগস্ট সোমবার ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শালিহর গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।
সোমবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)আফসান আফরোজের সভাপতিত্বে ও প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও এসো গৌরীপুর গড়ি’র সম্বনয়কারী আবু কাউসার চৌধুরী রন্টির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধ নাজিম উদ্দিন আহামেদ। প্রধান বক্ততা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নিলুফার আন্জুম পপি,উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা আক্তার রুবি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব আব্দু রহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা,সাংবাদিক,রাজনৈতিক ব্যক্তি,শহীদ পরিবারে সদস্য,সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। আলোচনা সভা শেষে শহীদ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ ও উপহার প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় শহীদ বেদীতে শহীদের স্বরনে মোম বাতি প্রজ্জলন করা হয়। পরিশেষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসো গৌরীপুর গড়ি পৃথকভাবে শহীদের স্বরনে শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য ও মোমবাতি প্রজ্জলন করে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-বাহিনী ও তাদের দোসররা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ব্রাশফায়ারে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের ১৪ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। পরে সেখানেই নিহত গ্রামবাসীদের কবর দেওয়া হয়।
ওই সময় গ্রামবাসীদের মধ্যে পাক-বাহিনীর ব্রাস ফায়ারে গণশহীদরা হলেন- উপজেলার ২ নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামের মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, ক্ষিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস, খৈলাস চন্দ্র নমদাস, শত্রগ্ন নমদাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস ও রায় চরণ বিশ্বাস। শালীহর গ্রামের ১৪ জনকে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি।পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে তৎকালীন ডা: বাদল চন্দ্র কর ঘরবাড়ি সহ পিতাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পাক বাহিনীর ভয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে ছিলেন।
পরবর্তীতে ডা: বাদল চন্দ্র কর তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আমৃত্যু কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।যুদ্ধকালীন সময়ে টেকেরঘাট সাব সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বর্গীয় ডা : বাদল চন্দ্র কর এর ছেলে অমল কান্তি কর বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুদীর্ঘ এ সময়ে সরকারের পালা বদল হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় শহীদ হওয়া ১৪ পরিবার আজও স্বীকৃতি পায়নি। সম্প্রতি শহীদ পরিবারের পক্ষে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এর নাতি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর।
জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এর নাতি অমল কান্তি কর বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে একাত্তরের ২১ আগস্ট সেদিন আমার (পিতামহ) দাদা এবং তার আপন বড় ভাই মোহিনী মোহন কর শহীদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাই নি। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন সেদিন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শহীদ হওয়া সবগুলো পরিবারকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেয়ার আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর এ দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ বধ্যভুমিতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শালিহর গণহত্যা দিবস পালন করা হয়ে থাকে।