তারিম আহমেদ ইমন, অভয়নগর (যশোর) থেকে। কারুশিল্পের নিখুঁত নিদর্শন, পরিশ্রম ও একাগ্রতার প্রতীক বাবুই পাখির বাসা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় তালগাছ,খেজুর গাছ কিংবা যে কোনো ধরণের উঁচু গাছে শোভা বর্ধন করতো এই বাবুই পাখির বাসা। এখন আর চোখে পড়ছে না বললেই চলে।
সম্প্রতি উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের এরশাদ এতিমখানা মাদ্রাসার সামনে কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখির বেশ কয়েকটি বাসা দেখা গেছে। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার সামনে কয়েকটি তালগাছের পাতাগুলোতে ঝুলছে বাবুই পাখির বেশ কয়েকটি বাসা। শিল্প শহর নওয়াপাড়া থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার দূরে দৃশ্যটি দেখতে ভিড় করছেন কোতুহলী মানুষ।
জানা যায়, বাবুই পাখিকে ‘তাঁতি পাখি’ বলে ডাকা হয়। গ্রীষ্মকাল থেকে তাদের প্রজনন মৌসুম। এই সময় পুরুষ বাবুই খড়কুটো জোগাড় করে নিজের ঠোঁট দিয়ে পাতা সেলাইয়ের মতো করে নিপুণভাবে বাসা গড়ে তোলে। বাবুইয়ের বাসা আগের মতো গ্রামের আঁকাাঁকা পথে আর তেমনটি দেখা যায় না। তাল ও খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় তাদের বাসা বানানোর উপযুক্ত স্থানও কমছে।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. আজিজ মোড়ল বলেন, ২০বছর ধরে আমাদের তালগাছে বাবুই বাসা বানায়। ছোটবেলায় এ দৃশ্য ছিল খুব স্বাভাবিক। এখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ফলে বাসাও হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন খোকন বলেন, বাবুই পাখির বাসা একসময় বাংলার গর্ব ছিল। আজ তা স্মৃতির পাতায়। তাদের রক্ষায় এখনই সচেতনতা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বইয়ের পাতায় এসব দেখবে।
উপজেলার পল্লী মঙ্গল আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ খায়রুল বাসার বলেন, এই পাখিগুলো শুধু আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষারও উপাদান। ওদের বাসা বানানো দেখেই আমরা শিখতাম ধৈর্য্য আর পরিশ্রম। এখন আর তেমন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, বাবুই পাখি টিকিয়ে রাখতে তালগাছ, খেজুরগাছসহ দেশীয় গাছ-গাছালি আরও বেশি করে লাগাতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ও কীটনাশক নিয়ন্ত্রণেরও উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।