ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। সোমবার দুপুরে এফটি-৭বিজিআই মডেলের যুদ্ধবিমানটি আছড়ে পড়ার ফলে এখন পর্যন্ত ৩২ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। নিহতদের মধ্যে ২৯ জনই শিশু শিক্ষার্থী, দুইজন শিক্ষক এবং যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম।
জানা যায়, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয় বিমানটি। প্রশিক্ষণ চলাকালে বারবার চেষ্টা করেও পাইলট জনবহুল এলাকা এড়িয়ে যেতে পারেননি। স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ার পরপরই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। শেষ মুহূর্তে পাইলট নিজেও প্রাণ হারান, তবে সহকর্মীদের ভাষায়, তিনি চাইলেই প্যারাসুট ব্যবহার করে বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু শিশুদের প্রাণ রক্ষার শেষ চেষ্টাটুকু করতে গিয়ে নিজেকেই উৎসর্গ করেন।
এ বিষয়ে বিমানের এক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ অনচ্ছুক শর্তে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের জন্য মরার শপথ নিয়েছি, কিন্তু শিশুরাতো এই শপথ নেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা শপথ নিয়েছি দেশ রক্ষার, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। কিন্তু যে শিশুরা এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল, তারা তো দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার শপথ নেয়নি। কেন তাদের প্রাণ হারাতে হল। এই ক্ষতি মেনে নেওয়া অসম্ভব।’
আইএসপিআরের তথ্যমতে, এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। এর মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ২০ জন আশঙ্কাজনক, সিএমএইচে ১৬ জন, বাকিরা ঢাকা মেডিকেল, লুবানা, উত্তরা আধুনিক ও ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছয়টি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি। হাসপাতালগুলোর পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে স্বজন হারানোর আর্তনাদে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান দেশবাসীর প্রতি রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
উদ্ধারে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি এবং ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স। সরকার মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-আধাসরকারি দপ্তরে অর্ধনমিত রেখেছে জাতীয় পতাকা।
এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে কামারপাড়া, উত্তরার বাসিন্দা এবং ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেয়ে তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়া (১৩) ও তার ভাই নাফি ইসলাম (৯)। নাদিয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন, বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। ভাই নাফি এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বাবা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম নিরব, মেয়ের দাফনের পর ছেলের জন্য প্রার্থনায় মগ্ন।
নিহত সায়ান ইউসুফ (১৪), সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সোমবার ভোররাত ৩টা ৫০ মিনিটে বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বাবা-মা দুজনই স্কুলের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। পাষাণের মতো বসে থাকা এই দম্পতির আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের বাতাস। বাবা ইউসুফ বলেন, ‘আমি আর এই দেশে থাকব না। রাজনীতিবিদরা দেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।’