বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা।।
যশোরের বাঘারপাড়ায় প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চিত্রা নদী খননের মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কোনো টেন্ডার ছাড়াই কয়েক দিন ধরে মাটি বিক্রি করছেন তারা। ট্রলি (ট্রাক্টরের ইঞ্জিনে ট্রাকের বডি) প্রতি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকার বিনিময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের এ মাটি ব্যবসা। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী নদী খননের মাটি কোনো ব্যাক্তি বিক্রি করতে পারবেন না। সরকারের রাজস্ব আদায়ের জন্য টেন্ডার বা নিলামের মাধ্যমে সাধারণত মাটি বিক্রি হয়। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দাম দেবেন, তিনিই একমাত্র মাটি বিক্রির সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে যশোর জেলা সদরের দাইতলা থেকে বাঘারপাড়া পৌরসভার ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটারের খনন কাজ শেষ করে। খননের মাটি নদীর দুই পাড়েই স্তুপ করে রাখা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী কোনো জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। তখন সেই দপ্তর নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরে এ মাটি বিক্রি করতে পারবে।
কিন্তু এসব নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছেন উপজেলার কড়াইতলা গ্রামের মৃত তৈবর বিশ্বাসের ছেলে খলিল বিশ্বাস। খলিল বিশ্বাসকে এ কাজে সহায়তা করছে দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নাসের আলি ও কড়াইতলার সাখাওয়াত হোসেন। মূলত এই দুই সব কাজ করছেন। তারা গত চার দিন পাঁচটি ট্রলিতে ৫’শ ৭’শ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ডোবা ভরাটে বা বাড়ির উঠান উঁচু করতে নদীর মাটি সরবরাহ করছেন। এতে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকা লুটে নিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কড়াইতলা গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি বলেন, নাসের মেম্বার ও সাখাওয়াত ট্রলি প্রতি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন লোকের পুকুর ভরাটে ও বাড়ির অঙ্গিনায় দেওয়ার জন্য মাটি বিক্রি করছেন। কারোর কাছ থেকে আবার বেশি টাকাও নিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের কড়াইতলা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্র নদী। নদীর পাশেই খলিল বিশ্বাসের পৈত্রিক সম্পত্তি আছে। সেই জমির পাশে ২০১৯ সালে নদী খননের মাটি ফেলে পানি উন্নয়নের বোর্ডের ঠিকাদার। এরপর গত ১২মার্চ খলিল বিশ্বাস নিজের বাড়ির পাশের ডোবা ভরাটের শর্তে মাটি তুলে নেওয়ার অনুমতি দেয় মেম্বার নাসের আলিকে। নাসের আলি ৫’শ ৭’শ টাকার চুক্তিতে নিজস্ব ট্রলির সাহায্যে কড়াইতলা গ্রামের বিভিন্ন ব্যাক্তিকে সরবরাহ করে চলেছেন। মাটি বিক্রির চুক্তিতে সহায়তা করেন একই গ্রামের সাখাওয়াত। মাটি বিক্রির জন্য ৫টি ট্রলি কাজ করছে। ৮ ঘণ্টায় এক একটি গাড়ি ৩ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। আর হেক্সোমিটার (মাটি কাটার গাড়ি) ড্রাইভার পাচ্ছেন প্রতি ঘণ্টা ১৩০০ করে। এসব টাকা বহন করা হচ্ছে মাটির বিক্রির মাধ্যমে। একইসাথে লাখ লাখ টাকা পকেটে পুরছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে খলিল বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁর ছেলে বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘বাবার ফোন নেই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর মাটি আমাদের জমিতে পড়ায় ইউএনও স্যারের অনুমতি নিয়ে নিজেদের একটা গর্ত ভরাট করেছি। তবে বাদ বাকি মাটি কোথায় বিক্রি হয়েছে বা ট্রলিতে করে নিয়ে গেছে তা আমার জানা নেই।’
ইউপি সদস্য নাসের আলি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি মাটি সরিয়ে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, গ্রামে আমার বিরোধী পক্ষ ষড়যন্ত্র করে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছেন।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সায়দুর রহমান বলেন, ‘নদী খননের মাটি ব্যাক্তি উদ্যোগে বিক্রির সুযোগ নেই। খুব শীঘ্রই চিত্রা নদী খননের মাটির টেন্ডার আহŸান করা হবে। চুরি করে মাটি বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, ‘খবর পেয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে যদি মাটি বিক্রয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’