পতিত জমি দেখিয়ে লিজ দেয়ার অভিযোগ; থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি।
দেশের প্রাচীণতম রেলওয়ে স্টেশন যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার অদূরে চেঙ্গুটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সরকারি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারসহ ডককে পতিত জমি দেখিয়ে লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ ডক রেলওয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারীর ছেলেকে লিজ দিয়েছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি ওই ডকে ৩ প্রজন্ম থেকে বসবাস করে আসা রেলওয়ের মৃত ভূমিহীন কর্মচারীর পরিবারসহ বসবাসরত ৭টি ভূমিহীন পরিবারকে লিজ গ্রহিতা জনৈক মিরাজ উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে তিনি ওই পরিবারগুলোর সদস্যদের নামে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে অসহায় এ পরিবারগুলো চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে। যদিও তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও বাপ-দাদা থেকে বসবাস করে আসা ওই জায়গা থেকে সরে না যাওয়ার জন্য একাট্টা হয়েছেন। তাদের দাবি তারা ইতোপূর্বে অনেকবার লিজ নেয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে লিজ না দিয়ে গোপনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমাদের বসবাসরত জায়গাকে পতিত জমি দেখিয়ে লিজ দেয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে জীবন দেবো তবুও জায়গা ছেড়ে দেবোনা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে নওয়াপাড়ার চেঙ্গুটিয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত সরকারি কোয়ার্টারে ও তার গা ঘেষে ৭ টি পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এরই একপাশে বসবাস করছেন রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত কর্মচারীরাও।
জানাগেছে, এই জায়গা পতিত দেখিয়ে রেলওয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মুক্তার মিস্ত্রীর ভাতিজা ও ৫ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান মিস্ত্রীর ছেলে মিরাজ হোসেন চাচার সহায়তায় গোপনে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় অসাধূ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে লিজ নিয়েছেন এবং বর্তমানে তাদের উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
ডকে বসবাসরত রেলওয়ের মৃত- কর্মচারী (ওয়েম্যান) শহাজান মোল্যার স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে এখানে বসবাস করে আসছিলাম। ১৫ বছর আগে রেলওয়েতে কর্মরত অবস্থায় অসবাধনবশত শাবলের আঘাতে স্বামী ভুমিহীন শাহাজান মোল্যা মারা যান। ৪ ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি সেখানেই বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে মিরাজ তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রেলওয়ের পুলিশ পরিচয়ে দু’জন এসেও তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে গেছে।
স্বামী পরিত্যক্তা ও মামাবাবা হারা ভূমিহীন মিনা বেগম (৩২) ও তার ভাই মামুন (১৭) জানান, ডকের ওই ঘরেই তাদের জন্ম হয়েছে। তাদের বাপ-দাদারাও এখানে বসবাস করে গেছেন। আমাদের নামে এই জায়গার ডিসিআর করে দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের নিকট থেকে ১০ হাজার করে টাকাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের না জানিয়ে গোপনে মিরাজকে ওই জায়গা পতিত দেখিয়ে লিজ দেয়া হয়েছে। আমাদের জীবন গেলেও আমার এই জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবোনা। একই অভিযোগ করেছেন, ডকে বসবাসরত সাবিহা, আকলিমা, ওমর সাদাত, লাভলিসহ অনেকেই।
এ ব্যাপারে তথ্য গোপন করে লিজ নেয়া মিরাজ হোসেনের ব্যবহৃত ০১৭১৮-০৮০৮৬০ নম্বরে ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে যশোর রেলওয়ের ১৭ নম্বর কাচারির আমিন আবদুল মতিনের সাথে কথা বললে তিনি স্টেশনের ডকের জায়গা পতিত জমি দেখিয়ে লিজ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। স্টেশনের ডক ও সরকারি কোয়ার্টারের জায়গা লিজ দেয়ার বিধান আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে জানান।
নওয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এস আই সোহাগ কুমার শর্মার সাথে কথা বললে, তিনি ওই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধামকি দেয়া কথা অস্বীকার করে বলেন, যেহেতু জায়গাটি একজন লিজ নিয়েছেন তার পক্ষে রেলওয়ে পুলিশ ওই জায়গায় যেতেই পারে। তবে কাউকে হুমকি ধামকি দেয়া হয়নি।
রেলওয়ের পাকশি জোনের স্টেট অফিসার মো: নুরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভুক্তভোগীরা অবৈধভাবে বসবাস করছে। তাদের আবেদন আমাদের অফিসে নিয়ে আসুক, বিষয়টি দেখবো।