ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে টেস্ট জেতা সহজ ব্যাপার নয়। হলোও তাই, চেন্নাইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেসেখেলেই জয় পেলো ভারত। আজ (টেস্টের চতুর্থ দিন) সকালেই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে টাইগারদের ২৩৪ রানে অলআউট করে দেয় স্বাগতিকরা। ২৮০ রানের বড় জয় পায় স্বাগতিক ভারত। ভারতের বিপক্ষে রানের নিরিখে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে হার এটি।
তৃতীয় দিনেই জয়ের সুবাশ পেতে শুরু করে ভারত। এক সেশনেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে তাদের একেবারে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় স্বাগতিকরা। ৪ উইকেটে ১৫৮ রান নিয়ে কোনও রকমে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। তবে এক অশ্বিনের ঘূর্ণিতে ২৩৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ১১৩ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
নাজমুল হোসেন শান্তদের সামনে জয়ের লক্ষ্য বিশাল বড়। জিততে হলে তাদেরকে যে করতে হবে বিশ্ব রেকর্ড! কারণ টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে। সেখানে বাংলাদেশের সামনে ৫১৫! আগেই অনুমেয় ছিল, এই বিশাল লক্ষ্য টপকানো প্রায় অসম্ভব। তবুও অন্তত একটু লড়াই তো করতে পারতো! সেটাও হলো না।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে অলআউট করতে ভারতের খরচ হয়েছে মাত্র ৬২.২ ওভার। প্রথম ইনিংসে শান্তরা অলআউট হয়েছিল ৪৭.১ ওভারে। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে মাত্র ১০৯.২ ওভার। ভারত যেখানে প্রথম ইনিংসেই ব্যাট করেছে ৯১.২ ওভার।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশের চার টপঅর্ডারকে সাজঘরে ফেরায় ভারত। রবীচন্দ্রন অশ্বিন একাই নেন ৩ উইকেট। তৃতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে বাংলাদেশের রান তখন ১৫৮। জয়ের জন্য তখনও দরকার আরও ৩৫৭ রান।
চতুর্থ দিনে ব্যাটিং করতে নামেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আজ (২২ সেপ্টেম্ব) সকালে স্কোরবোর্ডে ৩৬ রান যোগ করতেই আউট হন সাকিব, ভাঙে শান্ত-সাকিবের ৪৮ রানের জুটি। ৫৬ বলে ২৫ রান করে অশ্বিনের শিকার হন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
উইকেটে টিকতে পারেননি লিটন দাস। স্কোরবোর্ডে আর ১১ রান জমা করতেই লিটনকে সাজঘরে ফেরান জাদেজা। রোহিত শর্মার ক্যাচ হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। ২০৫ রানে বাংলাদেশের তখন ৬ উইকেট।
উইকেটে তখন শান্ত ও মিরাজ। দুজনেই আউট হয়েছেন বিগ শট খেলতে গিয়ে। বলতে গেলে নিজেদের উইকেট নিজেরাই বিলিয়ে দিয়েছেন। অশ্বিনের বলে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ক্যাচ তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ বলে ৮ রান করে ফেরেন এই ব্যাটার। জাদেজার বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে লিটন আউট হন ১ রান করে।
এক প্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তকে থামতে হয়েছে ৮২ রানে। জাদেজার বলে বুমরাহ’র হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক।
শেষ উইকেটটা পেয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ১৪ বলে ৭ রান করা হাসান মাহমুদকে ফেরান তিনি। ২৩৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারত জয় পায় ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে।
এর আগে টসে জিতে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নাজমুল হোসেন শান্ত। আগে ফিল্ডিং নিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অশ্বিন ও জাদেজার বড় জুটিতে ঘুঁরে দাড়ায় ভারত। ১৩৩ বলে ১১৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন অশ্বিন। জাদেজার ব্যাট থেকে আসে ৮৬ রান। শেষ পর্যন্ত ৩৭৬ রানে অলআউট হয় ভারত।
প্রথম ইনিংসে বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ। একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। তাসকিন পেয়েছেন ৩ উইকেট। নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে কোনও ১৪৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিবের ৩২, শান্ত’র ২০, লিটনের ২২ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ২৭ রান ছাড়া আর কোনও তেমন রান করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৪৭.১ ওভারেই শেষ হয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।
২২৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। রিশভ পন্থ ও শুভমান গিলের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে রোহিত শর্মার দল। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫ রানের। পাহাড়সম রান তাড়া করতে নেমে ৬২.১ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। সময় নিউজ