এ. এইচ. এম আজিজুল ইসলাম।
বারাকা বিনতে ছা’লাবা(রাঃ), যিনি সাধারণভাবে তাঁর উপনাম উম্মে আয়মান নামেই সমধিক পরিচিত, ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। নবী মুহাম্মদের (সাঃ) সাহাবী হিসেবে তিনি কেবল প্রাথমিক মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তই ছিলেন না, বরং তাঁর জীবনের প্রতিটি বাঁক নবীজির (সাঃ) সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছিল। উম্মে আয়মান(রাঃ) ছিলেন নবীজির (সাঃ) পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং মাতা আমিনা বিনতে ওয়াহাবের আবিসিনীয় দাসী। তবে দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে তিনি ইসলামের একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, উম্মে আয়মান(রাঃ) নবীজির (সাঃ) জন্মের সময় থেকেই তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি নবীজির (সাঃ) লালন-পালনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। নবীজি (সাঃ) তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং প্রায়শই “মা” বলে সম্বোধন করতেন। এই গভীর সম্পর্ক তাঁদের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন তৈরি করেছিল।
ইসলাম গ্রহণের পর উম্মে আয়মান (রাঃ) মক্কায় মুসলিমদের ওপর নেমে আসা কঠিন দিনগুলোতে ধৈর্য ধারণ করেন এবং ইসলামের প্রতি অবিচল থাকেন। হিজরতের পর তিনি মদিনায় যান এবং সেখানেও নবীজির (সাঃ) পাশে থাকেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় তাঁর সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়।
উম্মে আয়মানের(রাঃ) বিবাহ হয় প্রথমে যায়েদ ইবনে হারেসার (রাঃ) সাথে, যিনি ছিলেন নবীজির (সাঃ) আজাদ করা গোলাম এবং পুত্রতুল্য। এই বিবাহে উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর জন্ম হয়, যিনি ইসলামের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত সাহাবী এবং সেনাপতি হিসেবে সুপরিচিত। যায়েদের (রাঃ) মৃত্যুর পর উম্মে আয়মানের দ্বিতীয় বিবাহ হয় গাযী ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সাথে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিস ও সিরাতের গ্রন্থে উম্মে আয়মানের(রাঃ) মর্যাদা ও নবীজির (সাঃ) সাথে তাঁর সম্পর্কের গভীরতা উল্লেখ রয়েছে। বুখারী ও মুসলিমের মতো বিখ্যাত হাদিস সংকলনে তাঁর থেকে বর্ণিত কিছু হাদিসও পাওয়া যায়, যা ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
উম্মে আয়মান(রাঃ) কেবল নবীজির (সাঃ) একজন স্নেহময়ী তত্ত্বাবধায়ক বা সাহাবীই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন প্রথম যুগের মুসলিম নারীদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর সাহস, ধৈর্য, এবং ইসলামের প্রতি অবিচল আনুগত্য তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। নবীজির (সাঃ) প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং ত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে উম্মে আয়মানের(রাঃ) দৃঢ়তা ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। ওহুদের যুদ্ধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। তাঁর জীবনকাহিনী থেকে আমরা প্রাথমিক যুগের মুসলিম নারীদের ত্যাগ ও অবদানের এক স্পষ্ট চিত্র পাই, যেখানে তাঁরা পুরুষের পাশাপাশি ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
উম্মে আয়মানের(রাঃ) জীবন ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা নবীজির (সাঃ) সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক, ইসলামের প্রতি তাঁর অবিচল বিশ্বাস এবং প্রাথমিক মুসলিম সমাজে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার সাক্ষ্য বহন করে।