মোঃ মাসুম বিল্লাহ
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারী নাম। জুলাই অভ্যুত্থান সময়ে এই নাম আমাদের নতুন আলোর দিশা দিয়েছে। পরবর্তী থেকে এর নামটি টক অফ দা কান্ট্রি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েও এই উপদেষ্টা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাদের সততা নিষ্ঠা আন্তরিকতা দেশের মানুষ মনে রাখবে সহস্র বছর। সম্প্রতি সময়ে আসিফ মাহমুদের একটা ফেসবুক পোস্ট আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। সেখানে তিনি তার পিতার লাইসেন্স গ্রহণ করা কর্মকাণ্ডের আত্ম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে আসছেন। আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন এবং এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি খুব দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও খুব আনাড়ি হিসেবে অভিষেক ঘটে এরকম রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে কিন্তু তথাপি তাদের সততা ন্যায়নিষ্ঠা এক অনন্য দৃষ্টান্তের নজির রেখে চলেছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে সম্প্রতি জুলকারনাইন সায়ের আল জাজিরার একজন অনুসন্ধানি সাংবাদিকের একটা প্রতিবেদনে। তিনি দেখিয়েছেন যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পিতা সম্প্রতি সময়ে একটা ট্রেড লাইসেন্স অর্থাৎ ঠিকাদারি লাইসেন্স করিয়েছেন। এটা নিয়ে বিপত্তি শুরু হয়। পরবর্তীতে আসিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি পিতার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে পিতা ঠিকাদারি লাইসেন্স করিয়েছেন। তখন সে পিতাকে পরামর্শ দেয় এবং পিতা সে পরামর্শ অনুযায়ী লাইসেন্সটি বাতিলের ব্যবস্থা করে। ঘটনাটা এ পর্যন্তই ঠিক ছিল। কিন্তু এখানে সাধারণ মনে কিছু প্রশ্নের উদ্রেগ করে। আসলেই কি আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পিতা যে লাইসেন্সটা করেছেন সেই লাইসেন্সটি এই মুহূর্তে করা ঠিক হয়েছে? অথবা তিনি কেন এই লাইসেন্সটি করলেন? আর এর প্রেক্ষিতে এখন কেন আছি মাহমুদ ছাপায় গেয়েছেন?
সাধারণত আমাদের দেশে ক্ষমতার চর্চা হয়। আমাদের দেশে যারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন শুধু তারা পর্যন্ত না বরং তাদের আত্মীয়-স্বজন ১৪ গুষ্টি এযাবৎকাল ক্ষমতার চর্চা করে আসছেন এবং সুবিধা ভোগ করে অভ্যস্ত। ১৯৭১ পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই ধারাটা স্বাভাবিক একটা ধারা হিসাবে প্রবাহিত হয়ে আসছে। কেননা তারা কোন একটা নির্দিষ্ট নেতা বা সরকারের কোন একজনের আত্মীয়-স্বজন হওয়ার সুবাদে নিজের স্বার্থ, নিজের আর্থিক উন্নতিটা এত বেশি ত্বরান্বিত করেছেন যা কল্পনাতীত। এর পূর্বে আমরা দেখেছি যারা ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন তাদের আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন এলাকার লোকজন নানান ভাবে সুবিধা নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। শুধু তাই নয় বরং তার ইমেজটাকে ব্যবহার করেন,জনপ্রিয়তাটাকে ব্যবহার করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বাঁধালো বিপত্তি আসিফ মাহমুদের পিতার এই কর্মকাণ্ড। যদিও তিনি বলেছেন যে পিতা না বুঝে কাজটি করেছে। কিন্তু এই কথাটি আমরা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত নই। কারণ আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা ধারা প্রবাহিত হয়ে এসেছে সেটি হচ্ছে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তার থেকে বেনিফিটেড হওয়া। হয়তো তারই ধারাবাহিকতায় আসিফ মাহমুদের পিতা এরকম একটি কাজ করেছে। কিন্তু ছেলের অনুরোধে রক্ষাও করেছেন।
আমরা দেখে অভ্যস্ত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তাদের দুর্নীতি, তাদের স্বজনপ্রীতি এসবের সাথে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত। কিন্তু জুলাই যে এক নতুন ধারান বীজ বপন হয়েছে তা অনেকে বুঝে উঠতে পারছে না। যে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে আসিফ মাহমুদ সে ধারাই অভ্যস্ত না হওয়ার ফলে মিডিয়া কর্মীরা পর্যন্ত তারা অনেক কষ্টে ভুগছেন। কেননা তারা এরকম ক্ষমা চাওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশে আগে দেখেননি। দেখা যায়নি কোন নেতা তার ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন ধারার সূচনা ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আসিফ। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ২.০ এর যারা নেতা তারা এমনই। তারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চায়। এজন্য তারা তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য ক্ষমা চান। অন্যদিকে আমরা দেখি যে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছেন তিনি চাইলে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা লোপাট করতে পারতেন। নামে বেনামে করতে পারতেন। তিনি চাইলে মানুষ তাকে টাকার বস্তা দিয়ে যেত, তিনি সেগুলো সুইস ব্যাংকে পাচার করতে পারতেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মত অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারতেন। আরাম আয়েসে জীবন কাটাতে পারতেন।
কিন্তু তিনি সেটা করলেন না তিনি নজির স্থাপন করলেন। এই নজির বাংলাদেশে বিরল। আর এই বিরল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। কেননা তারা যে কোন ঘটনাকে ফেনিয়ে রসিয়ে ঘুলিয়ে পেচিয়ে প্রচার করতেই ভালোবাসে। তারা ভালোটাকে গ্রহণ করার মতো করে তৈরি হয়নি। এদেশের মানুষের ভাবনার পরিবর্তনের এখনি সময়। তাই আসুন নিজে বদলে যায়
সমাজটাকে বদলে দি।