ডেস্ক নিউজ।
ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জ সদরের নবগ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম এবং রিনা আক্তার দম্পতির শিশু সন্তান রায়হান। রফিকুল ইসলাম সৌদি আরবে থাকেন। এই দম্পতির বিয়ের ১৩ বছর পর জন্ম হয় শিশু রায়হানের। জন্ম থেকেই স্নায়ু রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফিতে ভুগছিল শিশুটি। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর মাংসপেশি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং বসতে বা উঠে দাঁড়াতে পারে না।
সন্তানের বিরল এই রোগের চিকিৎসার আশা যখন প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন রফিকুল-রিনা দম্পতি, তখন সৌভাগ্যক্রমে একেবারে বিনা মূল্যে অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এবং ব্যয়সাপেক্ষ এই জিন চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে যান তারা। ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালকে বিনামূল্যে ‘স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি’ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ইনজেকশন ‘জলজেনসমা’ একদম বিনামূল্যে সরবরাহ করেছিল বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস। এই ইনজেকশনটিই প্রয়োগ করা হয়েছে রায়হানের দেহে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শিশু রায়হানকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশনটি শরীরে দেওয়া হয়।
মা রিনা আক্তার বলেন, যখন তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য এত টাকার প্রয়োজন হবে বলে তিনি জানতে পারেন তখন একরকম আশায় ছেড়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন ” আমাদের এক লক্ষ টাকা জোগাড় করার ক্ষমতা নেই। আর বিয়ের এত বছর পর আমার সন্তান হয়েছে, সেই সন্তানকে চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে যেতে দেখে সহ্য করতে পারছিলাম না।”
বিরল স্নায়ুরোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি’র চিকিৎসায় যে ইনজেকশন দরকার হয়, সেটির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে এই চিকিৎসা। কিন্তু বাংলাদেশের এক দরিদ্র পরিবারের একটি শিশুর চিকিৎসায় একদম বিনামূল্যে এই ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে। ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে এখন শিশুটি ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে আছে।
নোভার্টিসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রিয়াদ মামুন বলেন এই ইনজেকশনটি আমেরিকায় বাজারজাত করা হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলিই এই ওষুধ কিনে থাকে।
তিনি বলেন “দরিদ্র দেশগুলোতে এই ওষুধ বিনামূল্যে সীমিত সংখ্যায় পাঠানোর জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই লটারিতেই বাংলাদেশের অত্যাধুনিক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগ অংশগ্রহণ করেছিল।”
“আক্রান্ত কয়েক জন শিশুর শরীরের রক্ত ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। লটারিতে সৌভাগ্যবান রায়হানকে নির্বাচিত করা হয়” বলছিলেন তিনি।
চিকিৎসকরা বলেন প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়।
দুই বছরের মধ্যে আক্রান্ত শিশুরা মারা যায়। শুধুমাত্র ওই ইনজেকশনটি দিলেই বেশিরভাগ শিশু বেঁচে যায়।
জলজেনসমা ইনজেকশনটি আসলে এক ধরণের জিন-থেরাপি। স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি হয় মূলত জিনগত ত্রুটির কারণে। আক্রান্ত শিশুর দেহে যখন জলজেনসমা ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় তখন ত্রুটিপূর্ণ জিনগুলো প্রতিস্থাপিত হয় ঠিকমত কাজ করছে এমন জিন দিয়ে।
একজনের দেহে এটি একবারই প্রয়োগ করতে হয় এবং একটি ডোজের দাম পড়ে ২২ লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা। বিবিসি