ময়না তদন্তের রিপোর্টে প্রকৃত হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে দাবি পরিবারের
নওয়াপাড়া পৌর (যশোর) প্রতিনিধি। অভয়নগরে যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা মেহেরুননেছা বিবি নিজে বাদি হয়ে মেয়ের জামাই জাহিদুল ইসলামকে আসামি করে যশোর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৫০/২৩ তারিখ ১৬-৮- ২০২৩।
উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের জব্বার মোল্লার ছেলে যৌতুকলোভী স্বামী জাহিদুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আজমিরা খাতুন উপজেলার রাজঘাট গ্রামের জাফরপুর এলাকার শামসুল রহমানের মেয়ে। তাদের মাওয়া নামের ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবার দাবি করে বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটন হবে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের স্বামী জাহিদুল ইসলাম তার স্ত্রী আজমিরা খাতুনকে (২৬) গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নির্যাতন করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্বামী জাহিদুল কৌশলে ঘরের আড়ায় দড়ি ঝুঁলিয়ে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ দেয়াপাড়া এলাকার জব্বার মোল্লার বাড়ি থেকে আজমিরার মরদেহ শোবার ঘর থেকে উদ্ধার করে। নিহত আজমিরা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মাটিতে শোয়ালে হাত মাথার ওপর উঠানো, গলায় ফাঁসের দাগ নেই। তার গায়ে কাদা মাটি মাখা অবস্থায় থাকে। যে কারণে সন্দেহ করে পুলিশ লাশ মর্গে প্রেরণ করে।
আরো জানা যায়, আসামি জাহিদুল আজমিরার বাবাকে ভুল বুঝিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। তাকে থানায় যেতে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদির স্বামীর স্বাক্ষর করা কাগজ থানায় জমা দিয়ে অপমৃত্যুর মামলা মুলে পুলিশ সুরতহাল ও ময়লা তদন্ত শেষে লাশ বাদির স্বামীর নিকট হস্তান্তর করেন। ওই দিন বাদি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার বাদি মেহেরুননেছা বলেন, আমার মেয়ে আজমিরা তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম তাকে আমার স্বামীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক আনার দাবি করে আসছিল। যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকার করায় আমার মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এবং লাশ নিয়ে নাটক করতে থাকে।
স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে নিহত হওয়ার আগে তার স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। আমরা বুঝিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে ওইদিন আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়। যাওয়ার ২ঘন্টা পরে তাকে নির্যাতন করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। আমি এর বিচার চাই।
নিহতের পিতা শামসুল রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত জামাই আমাদের কাছে মেয়ের মাধ্যমে যৌতুকের জন্য টাকা চেয়েছে। পর্যায়ক্রমে যৌতুক হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা, ৪০ হাজার টাকা, ইট ও টিন বাবদ ৬০ হাজার টাকা, নাতি মাওয়া জন্ম গ্রহণের সময়ে ২৬ হাজার টাকা,তার ঘরের আসবাবপত্র কিনতে ৩০ হাজার টাকা নেন।
তিনি আরো জানান, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় আজমিরাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
পাথালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক এসআই শামসুর রহমান জানান, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করেছে বলে আমার জানা নেই। তবে ওই সময় লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছিল।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার মন্ডল জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই বোঝা যাবে হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
এছাড়াও নিহতের মা মেহেরুননেছা আদালতে মামলা করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।