ডেস্ক নিউজ।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পরবর্তী সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ।
সিত্রাং প্রবল কিংবা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না নেয়ায় এ সময় তিনি মহান আল্লাহর কাছে ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তিনবার শুকরিয়া আদায় করেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি বলেন, আমাদের পূর্বাভাস ছিল, এটা বরগুনা ও পটুয়াখালির উপর দিয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আরও উত্তর পূর্ব দিকে ঘুরে যাবার কারণে পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার শুরু থেকেই আমাদের মাঠ প্রশাসন ও ভলান্টিয়ার কাজ করেছে।
তিনি জানান, আমাদের প্রায় ৬ হাজার ৯২৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লক্ষাধিক মানুষকে আমরা নিরাপদে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ঘূর্ণিঝড় যেহেতু রাত ১০টার পরে অতিক্রম করেছে, আশ্রিত মানুষ মধ্যরাত থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। সকাল হতে হতে সব আশ্রয় কেন্দ্র খালি হয়ে যায়। ঝড়ে আমাদের ৪১৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং সেখানে প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর এবং ১ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ এমনকি ঢাকাতেও আঘাত হেনেছে। এর ফলে, গাছচাপা পড়ে ৯ জন শেষ তথ্য অনুযায়ী মারা গেছেন। এদের মধ্যে গোপালগঞ্জে ২ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১ জন ভোলায় ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং শরিয়তপুরে ১ জন মারা গেছেন। সবগুলো মৃত্যুর কারণ ঘরের উপর গাছ পড়ে যাওয়া। শুধু ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একজন বাইরে ছিলেন এবং গাছচাপা পড়েছেন।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ যেগুলো বিচ্ছিন্ন ছিলে যেগুলো এখন মেরামত করে দ্রুত সংযোগ সম্পাদন করা হচ্ছে। ঢাকায় আমরা দেখেছি, গাছ পড়েছে। কয়েক জায়গায় রাস্তা বন্ধ ছিল। তবে দ্রুত এগুলো সরানো হয়েছে। মোহাম্মদপুরে বেশ জলাবদ্ধতা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি।
‘যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে গোপালগঞ্জের ২ জনকে ইতোমধ্যে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো অনুদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এটা আমাদের রাষ্ট্রের নীতিমালায় আছে মৃতদেহ সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা। এ অনুযায়ী কাজ করতে হবে,’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য অবশ্যই আমরা মন্ত্রণালয় থেকে টিন দেব এবং গৃহনির্মাণ মজুরির জন্য আমরা নগদ অর্থ দেব। নিয়ম আছে যে দুর্যোগের পর মাঠ প্রশাসন এটা বাস্তবায়ন করবে, তারপর জেলা পর্যায়ে ডিসিরা ডি ফর্মের মাধ্যমে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে। এটার পর আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করব। সেখানে যার যার মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি উপস্থাপন করবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব। এটা করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।
এর আগেও মৎস্য ঘেরে ক্ষতি হয়েছে যদিও এবার সামান্য। তারপরেও ক্ষতিগ্রস্থ মৎসচাষিদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে। যে যে পরিমাণ আবেদন করবে সে অনুযায়ী সাধারণত দেয়া হয় বলে জানান দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে ঝড় আঘাত হানার সময় ভাটা ছিল। এ কারণে জলোচ্ছ্বাস হয়নি। সর্বোচ্চ ২ ফুট পানি প্রবেশ করেছে। শুধুমাত্র ভোলাতে ৭ ফিট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এ কারণে সেখানে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনকে বলেছি চাহিদা পাঠাতে। আগামীকাল চাহিদা এলেও আমরা বরাদ্দ দিতে পারব। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ টিন ও নগদ টাকা আছে। পর্যাপ্ত খাদ্যও মজুদ আছে। সময় নিউজ