আইপিএলের নিলামে নাম নিবন্ধন করেই বেশ সাড়া জাগিয়ে ফেলেছিলেন বৈভাব সুরিয়াভানশি। তবে স্রেফ তালিকায় থাকাতেই সীমাবদ্ধ রইলেন না তিনি। নিলামের টেবিলেও বিস্ময়ের ঝড় তুললেন ভারতের এই বিস্ময়বালক, যা পৌছেঁ গেল বিশ্ব ক্রিকেটের নানা প্রান্তে। তবে রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান নির্বাহী জেইক ম্যাকক্রাম জানালেন, অবিশ্বাস্য এই প্রতিভাকে আগে থেকেই নজরে রেখেছিলেন তারা।
আইপিএলের নিলামে সোমবার ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দল পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন বৈভাব। তার ভিত্তিমূল্য ছিল ৩০ লাখ রুপি। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত তাকে দলে পায় রাজস্থান রয়্যালস। নিলামের দিন তার বয়স ১৩ বছর ২৪৩ দিন।
যদিও গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছেন, তার সত্যিকারের জন্মদিন ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেই অনুযায়ী তার বয়স এখন ১৫। তবে বয়স যদি সত্যি ১৫ হয় তার, তারপরও তো বিস্ময় খুব একটা কমে যাচ্ছে না। ৫ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করা বৈভাব গত বছর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে বেশ আলোচনায় আছেন। বয়সের দিক থেকে নানা কীর্তিতে অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু নজির তিনি এর মধ্যেই মেলে ধরেছেন।
বিহারের সন্তান তিনি। পাটনা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের ছোট শহর সামাস্তিপুরে জন্ম তার। বিহারের হয়ে গত জানুয়ারিতে রাঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়ে যায় তার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচ ম্যাচ খেলে এখনও ভালো কিছু তিনি করতে পারেননি। তবে এই ছোট্ট জীবনেই অনেক সম্ভাবনার ছাপ তিনি রেখে নজর কেড়েছেন।
বয়স সম্পর্কে জানানোর সেই সাক্ষাৎকারেই বৈভাব বলেছিলেন, নানা পর্যায়ের ক্রিকেটে ৪০টি সেঞ্চুরি ও দুটি ডাবল সেঞ্চুরি তিনি করেছেন। পরে বিহারের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের আসর রানধির ভার্মা টুর্নামেন্টে খেলেন ৩৩২ রানের ইনিংস। গত বছর চার দলের অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৫ রানের একটি ইনিংসও তিনি খেলেন।
সেই পথ ধরে গত জানুয়ারিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। তার আনুষ্ঠানিক বয়স তখন ১২ বছর ২৮৪ দিন। গত ৩৮ বছরের মধ্যে তার চেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা পড়েনি কোনো ভারতীয়র।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে যুব টেস্টে সেঞ্চুরি করেন ৫৮ বলে। ১৩ বছর ১৮৭ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে স্বীকৃত যুব ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ডও গড়েন সেদিন। ১৪ বছর ২৪১ দিন বয়সে শতরান করে আগেরটি ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর।
নিলামের দুই দিন আগে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে অভিষেক হয় তার। ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির এই আসরে প্রথম ম্যাচে ২ ছক্কায় ১৩ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।
সবমিলিয়ে তাকে নিয়ে আলোচনা বেশ ছিলই। তবে শুধু সেসব জেনেই নয়, বৈভাবকে কাছ থকে পরখ করে দেখেছেন রাজস্থানের একাডেমির কোচরাও। আইপিএল শুরুর আগে এই কয়েক মাসে তাকে আরও শাণিত করে তুলবে রাজস্থান, জানালেন ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান নির্বাহী।
“নাগপুরে আমাদের হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে ছিল সে। সেখানে সে ট্রায়াল দিয়েছে এবং আমাদের সেখানকার কোচিং স্টাফদের মুগ্ধতা উপহার দিয়েছে। সে অবিশ্বাস্য এক প্রতিভা এবং অবশ্যই সেই আত্মবিশ্বাস তো থাকতেই হবে যেন আইপিএলের মানের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে।” “সামনের কয়েক মাসে তাকে আরও উন্নত করে তোলার জন্য অনেক কাজ করা হবে। তবে অসাধারণ এক প্রতিভা সে এবং তাকে আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ হিসেবে পেয়ে আমরা খুবই রোমাঞ্চিত।”
বৈভাবের কোচ মূলত ছিলেন তার বাবা। সাঞ্জিব সুরিয়াভানশি নিজেও ক্রিকেটার ছিলেন। তবে বড় কোনো পর্যায়ে যেতে পারেননি। পরে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর অভিযানে লেগে পড়েন। এছাড়া গত বছর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাচের সময় ওয়াসিম জাফারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। খেলা নিয়ে সাবেক ভারতীয় ওপেনারের কাছ থেকে প্রায়ই নানারকম পরামর্শ নেন তিনি। বিডিনিউজ ২৪